রক্তঃ মানবদেহে রক্তনালিকাসমূহের ভিতর দিয়ে নিরন্তর প্রবহমান লাল বর্ণের অস্বচ্ছ, ঈষৎ ক্ষারীয়, চটচটে, লবণাক্ত প্রকৃতির তরল যোজক টিস্যুকে (connective tissue) রক্ত বলে। একজন পূর্ণবযুক্ত সুস্থ মানুষের দেহে প্রায় ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে অর্থাৎ দৈহিক মোট ওজনের প্রায় ৮%। রক্ত সামান্য ক্ষারীয়। এর মাত্রা ৭.৩৫-৭.৪৫ এবং তাপমাত্রা ৩৬-৩৮° সেলসিয়াস। রক্তের আপেক্ষিক গুরুত্ব পানির চেয়ে বেশি, প্রায় ১.০৬৫ । অজৈব লবণের উপস্থিতির জন্য রক্তের স্বাদ নোনতা। রক্তবাহিকাসমৃদ্ধ এবং হৃৎপিন্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যে তন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত দেহের বিভিন্ন অংশে সঞ্চালিত হয় তাকে রক্ত সংবহনতন্ত্র বলে। ব্রিটিশ চিকিৎসক Willium Harvey, ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে মানুষের রক্ত সংবহন সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা প্রদান করেন। সুনির্দিষ্ট বাহিকার মাধ্যমে রক্ত দেহের সবখানে সঞ্চালিত হয়।
লিস্ফোসাইট
নিউট্রোফিল
মোসাইট
ইওসিনোফিল
LDL
HDL
উভয়েই
কোনটিই নয়
অস্থি
অস্থিমজ্জা
পেশী
পেশী টিস্যু
থাইরয়েড গ্ল্যান্ড
থাইমাস
স্ক্যাপুলা
ক্যানাইন দাঁত
প্লাজমিন
সিরাম
ল্যাকটিয়েল
কাইল
700: 1
600:1
500:1
400:1
তরকারি কাটতে গিয়ে নিপার হাতের একটি জায়গায় কিছুটা কেটে গেল। কাটা স্থান হতে কিছুক্ষণ লাল বর্ণের তরল বের হলেও এক সময় তা বন্ধ হয়ে গেল।
মানুষের হৃৎপিণ্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে হৃদস্পন্দন তৈরি করে। এটি বিশেষ রক্ত বাহিকার মাধ্যমে সারাদেহে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পরিবহন করে।
ট্রাইকাসপিড ও বাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধের কারণে নিলয় থেকে রক্ত যথাক্রমে পালমোনারি ও সিস্টেমিক মহাধমনিতে যায়।
“রাফসানের হৃদস্পন্দন মিনিটে ৮৫ বার এবং রক্তচাপ ১৪০/১০০ mmHg"
তিশার মা ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগে আক্রান্ত। একদিন হঠাৎ বুকে প্রচণ্ড ব্যথা, দমবদ্ধতা এবং অতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় তিশা মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করে তিশাকে বললেন তার মায়ের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে ।
মানুষের হৃৎপিণ্ড অবিরত ত্রুটিপূর্ণ জীবনযাপনের কারণে এই মূল্যবান অঙ্গটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ভুলু এর হৃৎস্পন্দন অনিয়মিতভাবে হয়। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তাকে কৃত্রিম ব্যাটারি স্থাপনের পরামর্শ দিলেন।
রক্তের উপাদান (Components of Blood):
টেস্টটিউবে রক্ত নিয়ে সেন্ট্রিফিউগাল যন্ত্রে মিনিটে ৩০০০ বার করে ৩০ বার ঘুরালে রক্ত দুটি স্তরে বিভক্ত হয়ে পড়ে । উপরের হাল্কা হলুদ বর্ণের প্রায় ৫৫% যে অংশ থাকে তা রক্তরস বা প্লাজমা (plasma) এবং নিচের গাঢ়তর বাকি ৪৫% অংশ রক্তকণিকা (blood corpuscles)। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তকণিকাগুলো রক্তরসে ভাসমান থাকে। লোহিত বর্ণিকার আধিক্যের কারণে রক্ত লাল দেখায়রক্তরস (বা প্লাজমা) হচ্ছে রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশ। এতে পানির পরিমাণ ৯০-৯২% এবং দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের পরিমাণ ৮-১০% । রক্তরসের কঠিন পদার্থ বিভিন্ন জৈব (৭-৮%) ও অজৈব (০.৯%) উপাদান নিয়ে গঠিত। তা ছাড়া, কয়েক ধরনের গ্যাসও রক্তরসে পাওয়া যায়। রক্তরসের উপাদানগুলো হচ্ছে-
• খাদ্যসার (গ্লুকোজ, M অ্যামিনো এসিড, স্নেহপদার্থ, লবণ, ভিটামিন ইত্যাদি);
• গ্যাসীয় পদার্থ (O,, CO,, N, প্রভৃতি);
• রেচন পদার্থ (ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি);
• বিভিন্ন ধরনের আয়ন (Nai, Ki, Ca", CI, HCO3, HPO ইত্যাদি);
• রক্ত আমিষ (ফাইব্রিনোজেন, প্রোথ্রম্বিন, অ্যালবুমিন ও গ্লোবিউলিন);
• প্রতিরক্ষামূলক দ্রব্য (অ্যান্টিটক্সিন, অ্যাগ্লুটিনিন প্রভৃতি);
• অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি নিঃসৃত বিভিন্ন হরমোন; এবং
• কোলেস্টেরল, লেসিথিন, বিলিরুবিন, বিলিভারডিন ইত্যাদি নানা ধরনের যৌগ । Na এর মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে অ্যালডোস্টেরন।
রক্তরসের কাজঃ
• পরিপাকের পর খাদ্যসার রক্তরসে দ্রবীভূত হয়ে দেহের বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গে বাহিত হয়।
• টিস্যু থেকে যে সব বর্জ্যপদার্থ বের হয় তা রেচনের জন্য বৃক্কে নিয়ে যায়।
• টিস্যুর অধিকাংশ কার্বন ডাইঅক্সাইড রক্তরসে বাইকার্বনেটরূপে দ্রবীভূত থাকে ।
• খুব কম পরিমাণ অক্সিজেন এতে বাহিত হয় ।(*) লোহিত কণিকায় সংবদ্ধ হওয়ার আগে অক্সিজেন প্রথমে রক্তরসেই দ্রবীভূত হয়।
• রক্তরসের মাধ্যমে হরমোন, এনজাইম, লিপিড প্রভৃতি বিভিন্ন অঙ্গে বাহিত হয়।
• রক্তরস রক্তের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে ।
রক্তকণিকা (Blood Corpuscles): রক্তরসে ভাসমান বিভিন্ন ধরনের কোষকে রক্তকণিকা বলে। রক্তকণিকা প্রধানত তিন রকম, যথা-লোহিত রক্তকণিকা বা এরিথ্রোসাইট, শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট এবং অণুচক্রিকা বা প্রম্বোসাইট।
১. লোহিত রক্তকণিকা বা এরিথ্রোসাইট (Erythrocyte; গ্রিক erythros = লোহিত + kytos = কোষ) : মানুষে পরিণত লোহিত রক্তকণিকা গোল, দ্বিঅবতল, নিউক্লিয়াসবিহীন চাকতির মতো ও লাল বর্ণের। এর কিনারা মসৃণ এবং মধ্যাংশের চেয়ে পুরু। পরিণত কণিকা অত্যন্ত নমনীয় ও স্থিতিস্থাপক । প্রত্যেক লোহিত রক্তকণিকার গড় ব্যাস ৭.৩ এবং গড় স্থূলতা ২.২um। এরা ১২০ দিন বাঁচে।
বিভিন্ন বয়সের মানবদেহে প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে রক্তকণিকার সংখ্যা হচ্ছেঃ ভ্রূণদেহে ৮০-৯০ লাখ; শিশুর দেহে ৬০-৭০ লাখ; পূর্ণবয়স্ক পুরুষে ৫০ লাখ: পূর্ণবয়স্ক স্ত্রীদেহে ৪৫ লাখ । বিভিন্ন শারীরিক অবস্থায় এ সংখ্যার তারতম্য ঘটে, যেমন-ব্যায়াম ও গর্ভাবস্থায় কণিকার সংখ্যা বেশি হয়। প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা ৫০ লাখের চেয়ে ২৫% কম হলে রক্তাল্পতা (anaemia) দেখা দেয়। কিন্তু এ সংখ্যা ৬৫ লাখের বেশি হলে তাকে পলিসাইথেমিয়া বলে । রাসায়নিকভাবে এদের ৬০-৭০% পানি এবং ৩০-৪০% কঠিন পদার্থ। কঠিন পদার্থের মধ্যে প্রায় ৯০%ই হিমোগ্লোবিন। অবশিষ্ট ১০% প্রোটিন, ফসফোলিপিড, কোলেস্টেরল, অজৈব লবণ, অজৈব ফসফেট, পটাশিয়ামপ্রতিটি হিমোগ্লোবিন অণু হিম (heme) নামক লৌহ ধারণকারী রঞ্জক (pigment) এবং গ্লোবিন (globin) নামক প্রোটিন সমন্বয়ে গঠিত। প্রতি ১০০ মিলিলিটার রক্তে প্রায় ১৬ গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকে। হিমোগ্লোবিনের চারটি কোহিম পলিপেপটাইড চেইনের সাথে একটি হিম গ্রুপ যুক্ত থাকে। হিম গ্রুপের জন্যই রক্ত লাল হয়। অস্থিমজ্জায় অবস্থিত স্টেম কোষ (stem cell) বা হিমোসাইটোব্লাস্ট (hemocytoblast) নামক বৃহৎ ভূণীয় কোষ থেকে এরিথোসাইটের সৃষ্টি হয়। এরিথ্রোসাইট সৃষ্টিকে এরিথ্রোপোয়েসিস (erythropoesis) বলে। এদের আয়ু প্রায় ৪ মাস। এই সময়কালে এটি বার বার কৈশিকনালির প্রাচীর ভেদসহ প্রায় ১১০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। নিউক্লিয়াস না থাকার জন্য এদের স্বল্প আয়ু। কণিকাগুলো যকৃত ও প্লীহাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
লোহিত কণিকার কাজ :
• লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে দেহকোষে অধিকাংশ O, এবং সামান্য পরিমাণ CO, পরিবহন করে।
• রক্তের ঘনত্ব ও সান্দ্রতা (viscocity) রক্ষা করাও এর কাজ।
• এগুলোর হিমোগ্লোবিন ও অন্যান্য অন্তঃকোষীয় বস্তু বাফাররূপে রক্তে অম্ল-ক্ষারের সাম্য রক্ষা করে।
• প্লাজমাঝিল্লিতে অ্যান্টিজেন প্রোটিন সংযুক্ত থাকে যা মানুষের রক্ত গ্রুপিংয়ের জন্য দায়ী।
• এসব কণিকা রক্তে বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন উৎপন্ন করে ।
২. শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট (Leucocyte; গ্রিক leucos = বর্ণহীন, kytos = কোষ) : মানবদেহের পরিণত শ্বেত কণিকা হিমোগ্লোবিনবিহীন, অনিয়তাকার ও নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় কোষ। এগুলো ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস করে। মানুষের শ্বেত রক্তকণিকা নির্দিষ্ট আকারবিহীন। প্রয়োজনে আকার পরিবর্তিত হয়। নিউক্লিয়াস প্রথমে গোল বা ডিম্বাকার হয় কিন্তু বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে বৃক্কাকার ও অশ্বক্ষুরাকার ধারণ করে। নিউক্লিয়াস সাইটোপ্লাজমের চাপে একপ্রান্তে অবস্থান নেয়। এগুলো লোহিত রক্তকণিকার চেয়ে বড়, গড় ব্যাস আকৃতির বিভিন্নতা অনুসারে ৭.৫-২০1m। মানবদেহে প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে ৫-৮ হাজার শ্বেত রক্তকণিকা থাকে। শিশু ও অসুস্থ মানবদেহে সংখ্যা বেড়ে যায়। লোহিত রক্তকণিকা ও শ্বেত রক্তকণিকার অনুপাত ৭০০ : ১।
শ্বেত রক্তকণিকা নিউক্লিওপ্রোটিনসমৃদ্ধ এবং লিপিড, কোলেস্টেরল, অ্যাসকরবিক এসিড ও বিভিন্ন প্রোটিওলাইটিক এনজাইম বহন করে। আকৃতি ও গঠনগতভাবে শ্বেত রক্তকণিকাকে প্রধান দুভাগে ভাগ করা যায়,যথা-
ক. অদানাদার বা অ্যাগ্যানুলোসাইট (agranulocytes) এবং
খ. দানাদার বা - গ্র্যানুলোসাইট (granulocytes)।
ক. অ্যাগ্র্যানুলোসাইট : এ ধরনের লিউকোসাইট দানাহীন, স্বচ্ছ বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত এবং আকৃতিগতভাবে দুরকম : লিম্ফোসাইট (lymphocyte) ও মনোসাইট (monocyte)। এদের উৎপত্তি লসিকা গ্রন্থি, প্লীহা, থাইমাস ও ক্ষুদ্রান্ত্রের লসিকা টিস্যু থেকে।
লিম্ফোসাইট : এগুলো সমসত্ত্ব ও ক্ষারাসক্ত সাইটোপ্লাজমের পাতলা স্তরে আবৃত বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ছোট কণিকা। এগুলো কৈশিক নালি থেকে যোজক টিস্যুতে গমন করতে পারে। এসব কণিকা দুধরনের- বড় লিম্ফোসাইট (ব্যাস প্রায় ১২um) এবং ছোট লিম্ফোসাইট (ব্যাস প্রায় ৭.৫um)
মনোসাইট : এগুলো বিপুল পরিমাণ সাইটোপ্লাজম ও একটি অপেক্ষাকৃত ছোট, ডিম্বাকার ও বৃক্কাকার নিউক্লিয়াসবাহী বড় কণিকা।
খ. গ্র্যানুলোসাইট : এসব কণিকার সাইটোপ্লাজম সূক্ষ্ম দানাময় এবং ২-৭ খন্ডযুক্ত নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট । এদের ব্যাস ১২-১৫um। দানাগুলো লিশম্যান রঞ্জকে নানাভাবে রঞ্জিত হয়। বর্ণধারণের ক্ষমতার ভিত্তিতে গ্র্যান্যুলোসাইট তিন ধরনের-
নিউট্রোফিল (Neutrophil) : সাইটোপ্লাজম বর্ণ-নিরপেক্ষ দানাযুক্ত;
ইওসিনোফিল (Eosinophil) : দানাগুলো ইওসিন রঞ্জকে লাল বর্ণ ধারণ করে; এবং
বেসোফিল (Basophil) : দানাগুলো ক্ষারাসক্ত হয়ে নীল বর্ণ ধারণ করে।
শ্বেত রক্তকণিকার কাজ :
• মনোসাইট ও নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস (phagocytosis) প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে ধ্বংস করে। এই লিম্ফোসাইটগুলো অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে রোগ প্রতিরোধ করে (এজন্য এদের আণুবীক্ষণিকসৈনিক বলে)।
• বেসোফিল হেপারিন (hepatin) উৎপন্ন করে যা রক্তনালির অভ্যন্তরে রক্তজমাট রোধ করে।
• দানাদার লিউকোসাইট হিস্টামিন (histamin) সৃষ্টি করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
• নিউট্রোফিলের বিষাক্ত দানা জীবাণু ধ্বংস করে।
• ইওসিনোফিল রক্তে প্রবেশকৃত কৃমির লার্ভা এবং অ্যালার্জিক-অ্যান্টিবডি ধ্বংস করে।
৩. অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট (Thrombocytes or Platelets) থ্রিম্বোসাইট ক্ষুদ্রতম রক্তকণিকা। এরা গোল, ডিম্বাকার বা রডের মতো, দানাদার কিন্তু নিউক্লিয়াসবিহীন। এদের ব্যাস প্রায় ৩um, তবে, ৪-৫um ব্যাসসম্পন্ন বড় আকারের থ্রম্বোসাইটও দেখা যায়। পরিণত মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে থ্রম্বোসাইটের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ। অসুস্থ দেহে এগুলোর সংখ্যা আরও বেশি হয়। প্রতিটি থ্রম্বোসাইট দানাময় সাইটোপ্লাজম, গহ্বর, পিনোসাইটিক গহ্বর ও অন্যান্য কোষ অঙ্গাণুবিশিষ্ট এবং একক ঝিল্লিতে আবৃত। এতে প্রোটিন ও প্রচুর পরিমাণ সেফালিন নামক ফসফোলিপিড থাকে। থ্রম্বোসাইটের উৎপত্তি সম্বন্ধে মতানৈক্য রয়েছে। কোনো কোনো বিজ্ঞানীর মতে, লাল অস্থিমজ্জার বড় মেগাক্যারিওসাইট (megakaryocyte) থেকে এদের উৎপত্তি হয়। থ্রম্বোসাইটের গড় আয়ু প্রায় ৫-১০ দিন। আয়ু শেষ হলে থ্রম্বোসাইট প্লীহা ও অন্যান্য রেটিকুলো- এন্ডোথেলিয়াল কোষে ধ্বংস হয়।
অণুচক্রিকার কাজ :
• ক্ষতস্থানে রক্ততঞ্চন ঘটায় এবং হিমোস্ট্যাটিক পাগ (hemostatic plug) গঠন করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।
• রক্তনালির ক্ষতিগ্রস্থ এন্ডোথেলিয়াল আবরণ পুনর্গঠন করে।
• সেরাটোনিন নামক রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন করে যা রক্তনালির সংকোচন ঘটিয়ে রক্তপাত হ্রাস করে।
• ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে কার্বন-কণা, ইমিউন কমপ্লেক্স ও ভাইরাসকে ভক্ষণ করে।
হেমাটোলজি
িএরিথ্রোপয়সিস
হেমাটোকাইনেসিস
হেমাটোপয়সিস
লিম্ফোসাইট
নিউট্রপিক্যাল
মনোসাইট
থ্রম্বোসাইট
ইওসিনোফিল
বেসোফিল
গ্রানুলোসাইট
ইওসিনোফেল ও বেসোফিল
কোনোটিই নয়
রক্ত জমাট বাঁধা বা রক্ত তঞ্চন (Blood Clotting):
যে প্রক্রিয়ায় ক্ষতস্থান থেকে নির্গত হওয়া রক্তের প্লাজমা থেকে ফাইব্রিনোজেন আলাদা হয়ে ক্ষতস্থানে জালক নির্মাণের মাধ্যমে রক্তপাত বন্ধ করে ফলে রক্তের অবশিষ্টাংশ থকথকে পিত্তে পরিণত হয় সে প্রক্রিয়ার নাম রক্ত তঞ্চন বা রক্তের জমাট বাঁধা।
রক্তবাহিকার অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না, কারণ সেখানে হেপারিন (heparin) নামে এক পদার্থ সংব হয়। কিন্তু দেহের কোনও অংশে ক্ষত সৃষ্টি হলে রক্ত যখন দেহের ক্ষত অংশ থেকে বের হতে থাকে তখন ঐ অনে অণুচক্রিকাগুলো বাতাসের সংস্পর্শে ভেঙ্গে যায় এবং ক্ষতের মুখে রক্ত জমাট বাঁধিয়ে রক্তপাত বন্ধ করে। ব্রুক্তরসে অবস্থিত ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন ক্লটিং ফ্যাক্টর (clotting factor) রক্ত তঞ্চনে অংশ নেয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি ফ্যাক্টর হলো-
ক. ফাইব্রিনোজেন,
খ.প্রোথ্রম্বিন,
গ. থ্রম্বোপ্লাস্টিন ও
ঘ. Ca++
এগুলোর ধারাবাহিক কার্যকারিতার ফলে ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাঁধে। সংক্ষেপে রক্ত জমাট বাঁধার কৌশলটি তুলে ধরা হলো-
১.দেহের কোন অংশে ক্ষত সৃষ্টি হলে সেখান থেকে নির্গত রক্তের অনুচক্রিকাগুলো বাতাসের সংস্পর্শে এসে ভেঙ্গে যায় এবং প্রস্বোপাস্টিন
(thromboplastin; ক্লটিং ফ্যাক্টর) নামক প্লাজমা প্রোটিন উৎপন্ন হয়।
২.থ্রম্বোপ্লাস্টিন রক্তের হেপারিনকে অকেজো করে দেয় এবং রক্তরসে অবস্থিত ক্যালসিয়াম আয়নের উপস্থিতিতে প্রোথ্রম্বিন (prothrombin) নামক গ্লাইকোপ্রোটিনের সাথে ক্রিয়া করে সক্রিয় থ্রম্বিন (thrombin) এনজাইম (ক্লটিং ফ্যাক্টর) উৎপন্ন করে।
৩.থম্বিন রক্তে অবস্থিত ফাইব্রিনোজেন (fibrinogen; ক্লটিং ফ্যাক্টর I) নামক দ্রবণীয় প্লাজমা প্রেটিনের সাথে মিলে ফাইব্রিন (fibrin) নামক অদ্রবণীয় প্রোটিন সূত্রের সৃষ্টি করে। এভাবে সৃষ্ট সূত্রগুলো পরস্পর মিলিত হয়ে জালকের আকার ধারণ করে।
৪.ফাইব্রিনের জালকে লোহিত রক্তকণিকাগুলো আটকে যায়। ফলে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয় এবং রক্ত জমাট বেঁধে যায় (মানুষে রক্ত জমাট বাঁধার স্বাভাবিক সময় ৪-৫ মিনিট)।
সিরামঃ জমাট বাঁধা রক্ত থেকে যে হালকা হলুদ বর্ণের তরল জলীয় অংশ বেরিয়ে আসে তাকে রক্তের সিরাম (serum) বলে। সিরাম বস্তুতপক্ষে রক্তরস, তবে এতে ফাইব্রিনোজেন থাকে না।
শ্বেত কণিকা
হিমোগ্লোবিন
লোহিত কণিকা
ফাইব্রিনোজেন
হেপারিন
হিস্টামিন
থ্রম্বোপ্লাস্টিন
সেরোটনিন
লসিকাঃ লসিকা হচ্ছে দেহের টিস্যুরস (tissue fluid)। দেহের সমস্ত টিস্যু রক্তপূর্ণ কৈশিকজালিকায় (capillaries) বেষ্টিত থাকে। রক্তের কিছু উপাদান কৈশিকজালিকার প্রাচীর ভেদ করে কোষের চারপাশে অবস্থান করে। এ উপাদানগুলোকে সম্মিলিতভাবে লসিকা বা লিম্ফ বলে। এ টিস্যুরসে লোহিত কণিকা, অণুচক্রিকা এবং রক্তে প্রাপ্ত অধিকাংশ প্রোটিন অনুপস্থিত।
লসিকার উপাদান : লসিকাকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়, যেমন কোষ উপাদান ও কোষবিহীন উপাদান । লসিকার কোষ উপাদান হলো শ্বেতকণিকার লিম্ফোসাইট। প্রতি ঘন মিলিলিটার লসিকায় প্রায় ৫০০-৭৫০০০ লিম্ফোসাইট রয়েছে। লসিকার কোষবিহীন উপাদানের মধ্যে রয়েছে ৯৪% পানি এবং ৬% কঠিন পদার্থ। কঠিন পদার্থের মধ্যে প্রোটিন, লিপিড, শর্করা, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন, এনজাইম, অ্যান্টিবডি, অজৈব পদার্থ ইত্যাদি প্রধান । লসিকায় অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, ফাইব্রিনোজেন ও সামান্য প্রোথম্বিন জাতীয় প্রোটিন থাকে। ক্ষুধার্ত অবস্থায় লসিকায় ক্যাটের পরিমাণ কম থাকে। বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খেলে লসিকায় ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং লসিকা দুধের মতো সাদা দেখায়। এ ধরনের লসিকাকে কাইল (chyle) বলে।
লসিকাতন্ত্র (Lymphatic system): যে তন্ত্রের মাধ্যমে সমগ্র দেহে লসিকা রস প্রবাহিত হয় তাকে লসিকাতন্ত্র বলে। লসিকানালি ও লসিকাপর্ব বা লসিকাগ্রন্থির সমন্বয়ে লসিকাতন্ত্র গঠন করে। যে বিশেষ ধরনের নালিকার মাধ্যমে লসিকা সমগ্র দেহে পরিবাহিত হয় অদের লসিকানালি (lymp vessels) বলে ।অন্ত্রের প্রাচীরে সুবিকশিত লসিকানালিগুলোকে ল্যাকটিয়েল (kacteal) বলে। লসিকানালিতে কিছুটা পর পর এক ধরনের গোলাকার বা ডিম্বাকার স্ফীতি দেখা যায়। এদের নাম লসিকা পর্ব (lymph nodes) বা লসিকা গ্রন্থি (lymph gland)। এদের সংখ্যা রক্তকণির ৪০০-৭০০। প্লীহা (spleen), টনসিল (tonsil), অ্যাডেনয়েড জালক (adenoid) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য লসিকাপর্ব। গ্রীবা, বগলে ও কুঁচকিতে অধিক সংখ্যক লসিকাপর্ব থাকে।
লসিকার কাজঃ
* আন্তঃকোষীয় উন্মুক্ত স্থান থেকে অধিকাংশ প্রোটিন অণু লসিকার মাধ্যমে রক্তে ফিরে আসে এবং যেসব লিপিড কণা কৈশিকনালিকার সূক্ষ্ণ ছিদ্র অতিক্রম করতে পারে না সেগুলো লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়।
* দেহের যেসব টিস্যুতে রক্ত পৌঁছাতে পারেনা লসিকার মাধ্যমে সেসব টিস্যুতে পুষ্টি ও অক্সিজেন পরিবাহিত হয়।
* লসিকাস্থিত শ্বেত কণিকা (লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট) দেহের প্রতিরক্ষায় অবদান রাখে।
* লসিকা থেকে উৎপন্ন অ্যান্টিবডি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মানুষের হৃৎপিণ্ডের গঠন ( Structure of human heart):
দেহের যে প্রকোষ্ঠময় পেশল অঙ্গের নিরবিছিন্ন ছন্দময় সংকোচন ও প্রসারণের কারণে সমগ্র দেহে রক্ত সংবাহিত হয় তাকে হৃৎপিণ্ড বলে।
রক্তকে রক্তবাহিকার ভিতর দিয়ে সঞ্চালনের জন্য হৃৎপিণ্ড মানবদেহের পাম্পযন্ত্র (Pumping machine) রুপে কাজ করে। একজন সুস্থ মানুষের জীবদ্দশায় হৃৎপিণ্ড গড়ে ২৬০০ মিলিয়ন বার স্পন্দিত হয়ে প্রতিটি ভেন্ট্রিকল(নিলয়) প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন লিটার (বা দেড় লক্ষ টন) রক্ত বের করে দেয়। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষে হৃৎপিন্ডের ওজন ২৫০-৩৯০ গ্রাম ও স্ত্রীতে ২০০-২৭৫ গ্রাম। ভ্রূণ অবস্থায় মাতৃগর্ভে ৬ সপ্তাহ থেকে হৃদস্পন্দন শুরু হয় এবং আমৃত্যু এ স্পন্দন চলতে থাকে।
অবস্থান (Position) :
মানুষের হৃদপিণ্ড বক্ষগহ্বরে মধ্যচ্ছদার উপরে ও দুই ফুসফুসের মাঝ-বরাবর বাম দিকে একটু বেশি বাঁকা হয়ে অবস্থিত। এটি দেখতে ত্রিকোণাকার; গোঁড়াটি চওড়া ও ঊর্ধ্বমুখী থাকে, কিন্তু সূচালো শীর্ষ দেশ নিচের দিকে পঞ্চম পাঁজরের ফাঁকে অবস্থান করে।
আবরণ (Cover) :
হৃৎপিণ্ড একটি পাতলা দ্বিস্তরী আবরণে আবৃত। এর নাম পেরিকার্ডিয়াম (pericardium)।
পেরিকার্ডিয়াম এর বাইরের দিক তন্তুময় পেরিকার্ডিয়াম (fibrious pericardium) এবং এর ভেতরের দিক সেরাস পেরিকার্ডিয়াম (serous pericardium) নামে পরিচিত। সেরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুই স্তরে বিভক্ত, বাইরের দিকে প্যারাইটাল স্তর (parietal layer) এবং ভেতরের দিকে ভিসেরাল স্তর (visceral layer)। প্যারাইটাল ও ভিসেরাল স্তর দুটির মাঝখানের পেরিকার্ডিয়াল ফ্লুইড (pericardial fluid) নামক তরল পদার্থ থাকে।
প্রাচীর (wall) :
হৃৎপিন্ডের প্রাচীর অনৈচ্ছিক পেশি ও যোজক টিস্যু নিয়ে গঠিত। এর প্রাচীর গঠনকারী পেশীকে কার্ডিয়াক পেশি (cardiac muscle) বলে।
এপিকার্ডিয়াম (Epicardium)
মায়োকার্ডিয়াম (Myocardium)
এন্ডোকার্ডিয়াম (Endocardium)
হৎপিন্ডের প্রকোষ্ঠ সমূহ (Chambers of Heart):
মানব হৃৎপিণ্ড সম্পূর্ণরূপে চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট (completely four chambered) একটি ফাঁপা অঙ্গ। এর উপরের দুটি আট্রিয়া (atria: একবচনে atrium) বা অলিন্দ ও নিচের দুটি ভেন্ট্রিকল (ventricle) বা নিলয়। অ্যাট্রিয়ামের তুলনায় ভেন্ট্রিকলের প্রাচীর পুরু ও পেশীবহুল। বাম ও ডান অ্যাট্রিয়াম আন্তঃঅ্যাাট্রিয়াল (আন্তঃঅলিন্দ) পর্দা (inter-atrial septum) এবং বাম ও ডান ভেন্ট্রিকল আন্তঃভেন্ট্রিকুলার (আন্তঃনিলয়) পর্দা (inter-ventricular septum) দিয়ে পৃথক থাকে।
ডান আট্রিয়াম (Right atrium):
এর ভেতরের গায়ে সাইনো-আট্রিয়াল নোড (sino-atrial node) বা পেস মেকার (pace maker) নামে একটি পেশিখন্ড থাকে। এখান থেকে হৃৎস্পন্দন শুরু হয়। ডান আট্রিয়াম সুপিরিয়র ভেনাক্যাভা (অগ্র বা ঊর্ধ্ব মহাশিরা) ও ইনফেরিয়র ভেনাক্যাভার (পশ্চাৎ বা নিম্ন মহাশিরা) মাধ্যমে যথাক্রমে দেহের সম্মুখ ও পশ্চাৎ অঞ্চল থেকে এবং করোনারি শিরা ও করোনারি সাইনাস এর মাধ্যমে হৃৎপিন্ডের প্রাচীর থেকে ফিরে আসা CO2 সমৃদ্ধ রক্ত গ্রহণ করে। ডান অ্যাট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ছিদ্র (right atrio-ventricular aperture)-এর মাধ্যমে ডান আট্রিয়াম ডান ভেন্ট্রিকলে উন্মুক্ত হয়।
এ ছিদ্রপথে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা (tricuspid valves) নামে তিনটি ঝিল্লিময় টুপির মত কপাটিকা থাকে।
বাম আট্রিয়াম (Left atrium):
প্রকোষ্ঠটি পালমোনারি বা ফুসফুসীয় শিরার মাধ্যমে ফুসফুস থেকে ফিরে আসা O 2 সমৃদ্ধ রক্ত গ্রহণ করে। বাম আট্রিয়াম বাম আট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ছিদ্রের মাধ্যমে বাম ভেন্ট্রিকলে রক্ত প্রেরণ করে।
এ ছিদ্র মুখে বাইকাসপিড কপাটিকা (bicuspid valves) বা মাইট্রাল কপাটিকা (mitral valves) নামক দুটি ঝিল্লিময় টুপির মতো কপাটিকা থাকে।
ডান ভেন্ট্রিকল (Right ventricle):
এটি ডান আট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ছিদ্রের মাধ্যমে ডান আট্রিয়াম থেকে CO 2 সমৃদ্ধ রক্ত সংগ্রহ করে।
ডান ভেন্ট্রিকলের সম্মুখ ভাগ থেকে ফুসফুসীয় ধমনী (pulmonary artery) সৃষ্টি হয় যার মাধ্যমে CO 2 সমৃদ্ধ রক্ত ডান ভেন্ট্রিকল থেকে ফুসফুসে সঞ্চালিত হয়। এ ধমনির মুখে একটি একমুখী অর্ধচন্দ্রাকার বা সেমিলুনার কপাটিকা (semilunar valve) থাকে।
হৎপিন্ডের লম্বচ্ছেদ
বাম ভেন্ট্রিকল (Left ventricle):
হৃৎপিন্ডের বাম দিকে অবস্থিত বাম ভেন্ট্রিকুলার প্রাচীর তুলনামূলকভাবে অধিক পুরু কারণ এ প্রকোষ্ঠ থেকেই সমগ্র দেহের রক্ত প্রেরিত হয় (অন্যদিকে ডান ভেন্ট্রিকল থেকে রক্ত কেবল ফুসফুসে প্রেরিত হয়) যাতে অনেক বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। বাম ভেন্ট্রিকল বাম আট্রিয়াম থেকে বাম আট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ছিদ্রের মাধ্যমে O 2 সমৃদ্ধ রক্ত গ্রহণ করে। বাম ভেন্ট্রিকলের সম্মুখ হতে সিস্টেমিক মহাধমনী বা অ্যাওট্রা (aorta) উৎপন্ন হয় এবং এর মাধ্যমে সমৃদ্ধ রক্ত দেহের বিভিন্ন অঙ্গের প্রেরিত হয়।
লম্বা ও নলাকার
নলাকার
মাকু আকৃতির
কোনোটিই নয়
ডান আট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা
বাম আট্রিওভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা
আওর্টিক কপাটিকা
পালমোনারি কপাটিকা
হার্টবিট – কার্ডিয়াক চক্র (Cardiac Cycle):
হৃৎপিণ্ডের একবার সংকোচন (সিস্টোল) ও একবার প্রসারণ (ডায়াস্টোল)-কে একত্রে হার্টবিট বা হৃৎস্পন্দন (heart beat) বলে । প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির হৃৎস্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে প্রায় ৭০-৮০ বার। (প্রতি হৃৎস্পন্দন সম্পন্ন করতে সিস্টোল ও ডায়াস্টোলের যে চক্রাকার ঘটনাবলি অনুসৃত হয় তাকে কার্ডিয়াক চক্র বা হৃৎচক্র বলে। যদি প্রতি মিনিটে গড়ে ৭৫ বার হার্টবিট হয় তবে কার্ডিয়াক চক্রের সময়কাল ৬০/৭৫ = ০.৮ সেকেন্ড। স্বাভাবিকভাবেই অ্যাট্রিয়াল চক্র এবং ভেন্ট্রিকুলার চক্র উভয়ের স্থায়ীত্ব ০.৮ সেকেন্ড।
কার্ডিয়াক চক্র চলাকালীন হৃৎপিন্ডের মধ্যে রক্তসংবহনঃ
১. অ্যাট্রিয়াম-এর ডায়াস্টোল (Atrial diastole) : এ সময় অ্যাট্রিয়ামদুটি প্রসারিত বা শিথিল অবস্থায় থাকে। ট্রাইকাসপিড এবং বাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ হয়। অ্যাট্রিয়াম-মধ্যবর্তী চাপ হ্রাস পায়, ফলে দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে CO2-সমৃদ্ধ রক্ত সুপিরিয়র ভেনাক্যাভা এবং ইনফিরিয়র ভেনাক্যাভা দিয়ে ডান অ্যাট্রিয়ামে এবং পালমোনারি শিরা দিয়ে ফুসফুস থেকে O2-সমৃদ্ধ রক্ত বাম অ্যাট্রিয়ামে প্রবেশ করে। এ সময় হৃপিন্ডের পেশি থেকেও CO2-সমৃদ্ধ রক্ত করোনারি সাইনাসের মাধ্যমে ডান অ্যাট্রিয়ামে আসে। অ্যাট্রিয়ামদুটি রক্তপূর্ণ হলে অ্যাট্রিয়ামের সিস্টোল ঘটে। এ দশার সময়কাল ০.৭ সেকেন্ড ।
২. অ্যাট্রিয়ামের সিস্টোল (Atrial systole) : অ্যাট্রিয়ামের ডায়াস্টোল শেষ হলে প্রায় একই সাথে উভয় অ্যাট্রিয়াম সংকুচিত হয়। যদিও সংকোচনের ঢেউ প্রথমে ডান অ্যাট্রিয়াম থেকে শুরু হয়ে বাম অ্যাট্রিয়ামে ছড়িয়ে পড়ে। ডান অ্যাট্রিয়ামের সাইনো-অ্যাট্রিয়াল নোড (sino-atrial node) থেকে সংকোচনের সূত্রপাত ঘটে। অ্যান্টিয়ামের সিস্টোল ০.১ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। প্রথমার্ধে অর্থাৎ প্রথম ০.০৫ সেকেন্ড সংকোচন সর্বোচ্চ মাত্রায় থাকে, একে ডায়নামিক (dynamic) পর্যায় বলে। আর দ্বিতীয়ার্ধে অর্থাৎ পরবর্তী ০.০৫ সেকেন্ড ক্ষীণতর হতে হতে প্রশমিত হয়। একে অ্যাডায়নামিক (adynamic) পর্যায় বলে।
৩. ভেন্ট্রিকলের সিস্টোল (Ventricular systole) : অ্যাট্রিয়ামের সিস্টোলের পরপরই (প্রায় ০.১-০.২ সেকেন্ড প্র) ভেন্ট্রিকলদুটি রক্তপূর্ণ অবস্থায় সংকুচিত হয়। ট্রাইকাসপিড ও বাইকাসপিড কপাটিকা সজোরে বন্ধ হয় এবং সেমিলুনার কপাটিকা খুলে যায়। এতে লাব (lub) সদৃশ প্রথম শব্দের সৃষ্টি হয় । ভেন্ট্রিকল-মধ্যবর্তী চাপ বৃদ্ধি পায় এবং ভেন্ট্রিকল থেকে রক্ত ভেন্ট্রিকলের বাইরে নির্গত হয়। ডান ভেন্ট্রিকল থেকে CO2-সমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি ধমনিতে বাম ভেন্ট্রিকল থেকে O2-সমৃদ্ধ রক্ত অ্যাওর্টায় প্রবেশ করে। এ দশার সময়কাল ০.৩ সেকেন্ড ।
৪. ভেন্ট্রিকল-এর ডায়াস্টোল (Ventricular diastole ) : ভেন্ট্রিকলের সিস্টোলের পরপরই এর ডায়াস্টোল শুরু হয়। এ দশার সময়কাল ০.৫ সেকেন্ড । যখনই ভেন্ট্রিকল প্রসারিত হতে থাকে তখন ভেন্ট্রিকল মধ্যস্থ চাপ কমতে থাকে । ফলে অ্যাওটা ও পালমোনারি ধমনির রক্ত ভেন্ট্রিকলে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু অতি দ্রুত সেমিলুনার কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায় । এ সময় ডাব (dub) সদৃশ দ্বিতীয় শব্দ উৎপন্ন হয়। সুতরাং, হৃৎপিন্ডের শব্দগুলো হচ্ছে-
ভেন্ট্রিকলের সিস্টোল = লাব (lub); ভেন্ট্রিকলের ডায়াস্টোল = ডাব (dub)
অ্যাট্রিয়াম | ভেন্ট্রিকল | ||
ডায়াস্টোল | সিস্টোল | ডায়াস্টোল | সিস্টোল |
০.৭ সে. | ০.১ সে. | ০.৫ সে. | ০.৩ সে. |
0.15সে
0.03 সে
0.05 সে
0.35 মে
হার্টবিটের মায়োজেনিক নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্দীপনা পরিবহনঃ
মানুষসহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর হৃৎপিণ্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে সমগ্র দেহে রক্ত সঞ্চালন করে। এতে প্রচণ্ড গতিতে দেহে রক্ত প্রবাহিত হয়। বাইরের কোন উদ্দীপনা ছাড়াই হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণকে মায়োজেনিক নিয়ন্ত্রণ (myogenic muscle origin, myo - muscle + genic = giving rise to) বলে অর্থাৎ স্নায়ুতন্ত্র বা হরমোন, কিংবা অন্য কোন উদ্দীপনা ছাড়াই নিজ থেকে হৃৎস্পন্দন তৈরি হয়। কোন স্তন্যপায়ী প্রাণীর হৃৎপিণ্ড তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে O2- সমৃদ্ধ লবণ দ্রবণে ৩৭° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে দিলে তাতে বাইরের কোন উদ্দীপনা ছাড়াই বেশ কিছু সময় পর্যন্ত হাটবিট চলতে থাকবে । প্রকৃতপক্ষে হৃৎপিণ্ডের প্রাচীরের কিছু রূপান্তরিত হৃৎপেশি মায়োজেনিক প্রকৃতির জন্য দায়ী। হৃৎপিণ্ডের এই বিশেষ ধরনের পেশিগুলোকে সম্মিলিতভাবে সংযোগী টিস্যু বা জাংশনাল টিস্যু (junctional tissue ha বলে। হৃৎপিণ্ডের সংযোগী টিস্যুগুলো নিচেবর্ণিত ধরনের।
১. সাইনো-অ্যাট্রিয়াল নোড (Sino-Atrial Node, সংক্ষেপে SAN) : এটি ডান অ্যাট্রিয়ামের প্রাচীরে, ডান অ্যাট্রিয়াম ও সুপিরিয়র ভেনাক্যাভার ছিদ্রের সংযোগস্থলেঅবস্থিত এবং স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে কিছু স্নায়ুপ্রান্তসহ অল্প পদসংখ্যক হৃৎপেশিতন্ত্র নিয়ে গঠিত। এগুলো ১০-১৫ mm লম্বা, ৩mm চওড়া এবং ১mm পুরু। SAN থেকে সৃষ্ট একটি অ্যাকশন পটেনসিয়াল (action potential ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালের মাধ্যমে হার্টবিট শুরু হয়। এই অ্যাকশন পোটেনসিয়াল ছড়িয়ে সাথে সাথে স্নায়ু উদ্দীপনার অনুরূপ উত্তেজনার একটি ছোট ঢেউ হৃৎপেশির দিকে অতিক্রান্ত হয়। এটি অ্যাট্রিয়ামের প্রাচীরে ছড়িয়ে অ্যাট্রিয়ামের সংকোচন ঘটায়। SAN—ক পেসমেকার (pacemaker) বলে কারণ প্রতিটি উত্তেজনার ঢেউ এখানেই সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তী উত্তেজনার ঢেউ সৃষ্টির উদ্দীপক হিসেবেও এটি কাজ করে।
২. অ্যাট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার নোড (Atrio Ventricular Node, সংক্ষেপে AVN) : ডান অ্যাট্রিয়াম-ভেন্ট্রিকলের প্রাচীরে অবস্থিত SAN-এর অনুরূপ গঠন বৈশিষ্ট্যের AVN টিস্যু AV বান্ডেল নামক বিশেষ পেশিতন্তু গুচ্ছের সাথে যুক্ত থাকে। AV বাণ্ডেল-এর মাধ্যমে হৃৎউদ্দীপনার ঢেউ অ্যাট্রিয়াম থেকে ভেন্ট্রিলে প্রবাহিত হয়। SAN থেকে AVNE উদ্দীপনার ঢেউ পরিবহনে ০.১৫ সেকেন্ড দেরি হয়। অর্থাৎ ভেন্ট্রিকুলার সিস্টোল শুরুর আগে অ্যাট্রিয়াল সিস্টোল সম্পূর্ণ হয়।
৩. পার্কিনজি তন্তু (Purkinje fibre) : AV বাণ্ডেল, বাওল অব হিজ (Bundle of His) নামক পরিবর্তিত হৃৎপেশি তন্তু-গুচ্ছের সাথে যুক্ত থাকে । বাণ্ডেল অব হিজ ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম-এ অবস্থান করে এবং দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে হৃৎপিণ্ডের অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। বাণ্ডল অব হিজ থেকে সূক্ষ্ণ পার্কিনজি তন্তুর সৃষ্টি হয়ে ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম থেকে সরাসরি প্যাপিলারি পেশিতে এবং পরে ভেন্ট্রিকলের পার্শ্বপ্রাচীরে প্রসার লাভ করে। হৃৎউদ্দীপনা বাণ্ডেল অব হিজ বরাবর দ্রুততার সাথে পরিবাহিত হয় এবং ভেন্ট্রিকলের সবখানে বিস্তার লাভ করে। ভেন্ট্রিকল-দুটি একই সাথে সংকুচিত হয়। হৃৎপিণ্ডের নিম্নদেশ থেকে সংকোচন শুরু হয়ে তা উপরের দিকে বিস্তার লাভ করে।
রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসারঃ
রক্তনালির ভিতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রাচীর গাত্রে যে পার্শ্বচাপ প্রয়োগ করে তাকে রক্তচাপ বলে। হৃৎপিণ্ডের বিশেষত ভেন্ট্রিকল (নিলয়)-এর সংকোচনের ফলেই রক্ত ধমনির মধ্যদিয়ে অব্যাহতভাবে বহমান থাকে। ভেন্ট্রিকলের সংকোচন (systole) অবস্থায় রক্তচাপ বেশি থাকে এবং এ চাপকে সিস্টোলিক চাপ (systolic pressure বলে । অপরদিকে ভেট্রিকলের প্রসারণ (diastole) কালে রক্তচাপ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। একে বলা হয় ডায়াস্টোলিক চাপ (diastolic pressure)। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক সিস্টোলিক চাপ হচ্ছে ১১০-১২০ mmHg (মিলিমিটার পারদ স্তম্ভ) এবং স্বাভাবিক ডায়াস্টোলিক চাপ ৭০-৮০ mmHg. রক্ত স্বাভাবিক সীমার উপরে থাকলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ (hypertension) এবং স্বাভাবিক সীমার নিচে থাকলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ (hypotension) বলে । মানুষের রক্তচাপ মাপার যন্ত্রকে স্ফিগমোম্যানোমিটার (sphygmomanometer) বলা হয়। বয়স, লিঙ্গ, পেশা, খাদ্যাভাস, জীবনযাপন পদ্ধতি ইত্যাদি কারণে মানুষের রক্তচাপের তারতম্য ঘটে।
ব্যারোরিসেপ্টরঃ
মানুষের রক্তবাহিকার প্রাচীরে বিশেষ সংবেদী স্নায়ু প্রান্ত (sensory nerve ending) থাকে। এগুলো রক্তচাপ পরিবর্তনে বিশেষভাবে সাড়া দেয় এবং দেহে রক্ত চাপের ভারসাম্য রক্ষা করে। এই সংবেদী স্নায়ু প্রান্তকে ব্যারোরিসেপ্টর বলে ) এসব স্নায়ু প্রান্ত অস্বাভাবিক রক্তচাপ শনাক্ত করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে যে বার্তা পাঠায় তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র হৃৎস্পন্দন মাত্রা ও শক্তি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ স্বাভাবিককরণে ভূমিকা পালন করে। সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি ব্যারোরিফ্লেক্স (bororeflex) নামে পরিচিত।
ব্যারোরিসেপ্টর দুরকম-উচ্চচাপ ব্যারোরিসেপ্টর এবং নিম্নচাপ ব্যারোরিসেপ্টর ।
১. উচ্চচাপ ব্যারোরিসেপ্টর (High Pressure Baroreceptors) : অনুপ্রস্থ অ্যাওটিক আর্চ এবং ডান ও বাম অন্তঃস্থ ক্যারোটিড ধমনির ক্যারোটিড সাইনাস-এ এসব ব্যারোরিসেপ্টর অবস্থান করে। রক্তের চাপ বেড়ে গেলে অর্থাৎ রক্তনালির প্রসারণ ঘটলে সেখানকার ব্যারোরিসেপ্টরগুলো উদ্দীপ্ত হয় এবং এই উদ্দীপনা মস্তিষ্কের মেডুলাতে সঞ্চালিত হয় এবং এখানে ভ্যাসোমটর (vasomotor) কেন্দ্রটি দমিত হয়। ফলশ্রুতিতে সিমপ্যাথেটিক স্নায়ু বরাবর হৃৎপিন্ড ও রক্তনালিতে চেষ্টীয় (motor) বা আজ্ঞাবহ উদ্দীপনা পরিবহনের হার হ্রাস পায়। আজ্ঞাবহ উদ্দীপনার কমতিতে হৃৎপিন্ডের পাম্পিং ক্রিয়া এবং রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্ত সংবহনের মাত্রা হ্রাস পায়। এভাবে রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। রক্ত চাপ পড়ে গেলে (যেমন-মানসিক আঘাতে) ক্যারোটিড ও অ্যাওটিক ব্যারোরিসেপ্টর থেকে সংকেত যথাক্রমে গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল ও ভ্যাগাস স্নায়ুর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেডুলা অবলংগাটায় জড়ো হয়। মেডুলা অবলংগাটা তথ্যগুলো হৃৎপেশি, কার্ডিয়াক পেসমেকার, দেহের ধমনিকা বা আর্টারিওল (ধমনির শূক্ষ্ণ শাখা) ও শিরায় প্রেরণ করে। ফলশ্রুতিতে হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয় ও সজোরে সংকুচিত হয় এবং ধমনির রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে।
২. নিম্নচাপ ব্যারোরিসেপ্টর বা আয়তন রিসেপ্টর (Low-Pressure Baroreceptors or Volume Receptors): বড় বড় সিস্টেমিক শিরা, পালমোনারি রক্তবাহিকা এবং ডান অ্যাট্রিয়াম ও ভেন্ট্রিকলের প্রাচীরের ব্যারোরিসেপ্টরগুলো এ ধরনের। এসব রিসেপ্টর রক্তের আয়তন (blood volume) নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। রক্তের আয়তন কমে গেলে রক্তচাপও কমে যায় । তখন আয়তন রিসেপ্টর মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস-এ বার্তা প্রেরণ করে। ফলে পিটুইটারি গ্রন্থির নিউরোহাইপোফাইসিস কর্তৃক অ্যান্টিডাইউরিটিক বা ভ্যাসোপ্রেসিন হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায় । উক্ত হরমোন বৃক্কনালিকা কর্তৃক পানি ও লবণ পুনঃশোষণ বাড়িয়ে রক্তের আয়তন বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্তচাপ বাড়ায়। ভ্যাজোপ্রেসিন হরমোন সরাসরি রক্তনালিকার সংকোচন ঘটিয়েও রক্তচাপ বৃদ্ধি করে । রক্তের আয়তন তথা চাপ কমে গেলে স্বয়ংক্রিয় বা সিমপ্যাথেটিক স্নায়ু উদ্দীপ্ত হওয়ায় বৃক্কের অন্তর্বাহী ধমনি থেকে রেনিন এনজাইম ক্ষরণ বেড়ে যায়। রেনিন এনজাইমের কার্যকারিতায় রক্তের আয়তন বাড়িয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ আয়তন রিসেপ্টরের প্রভাব রয়েছে রক্ত সংবহন ও রেচন উভয় তন্ত্রে ।
মানবদেহে রক্ত সংবহন (Blood Circulation of Human Body) : মানুষের রক্ত সংবহনতন্ত্র বদ্ধ ধরনের (closed type) । অর্থাৎ রক্ত হৃৎপিণ্ড, ধমনি, শিরা ও কৈশিকনালির মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়ে অভ্যন্তরীণ পরিবহন সম্পন্ন করে। তাছাড়া মানুষের রক্ত সংবহনতন্ত্রে দ্বি-চক্রীয় সংবহন (double circulation) অর্থাৎ সিস্টেমিক (systemic) ও পালমোনারি (pulmonary) চক্র পরিলক্ষিত হয়। মানবদেহে চার পদ্ধতিতে রক্তসংবহন সংঘটিত হয়, যথা- ১. সিস্টেমিক, ২. পালমোনারি, ৩. পোর্টাল এবং ৪. করোনারি
শিরা ও পালমোনারি শিরা
শিরা ও ধমনি
ধমনি ও পালমোনারি ধমনি
ধমনি ও পালমোনারি শিরা
অ্যানজাইনা (Angina):
হৃৎপেশি যখন O2 সমৃদ্ধ পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায় না তখন বুক নিষ্পেষিত হচ্ছে বা দম বন্ধ হয়ে আসছে এমন মারাত্মক অস্বস্তি অনুভূত হলে সে ধরণের বুকে ব্যথাকে অ্যানজাইনা বা অ্যানজাইনা পেকটোরিস (angina/angina pectoris) বলে।
অ্যানজাইনার লক্ষণ (Symptoms of Angina)
১. উরঃফলক বা স্টার্নামের (sternum) পিছনে বুকে ব্যথা হওয়া।
২. ব্যায়াম বা অন্য শারীরিক কাজে,মানসিক চাপ, অতি ভোজন, শৈত্য বা আতংকে বুকে ব্যথা হতে পারে।
ব্যথা ৫–৩০ মিনিট স্থায়ী হয়।
৩. অ্যানজাইনা গলা, কাধ, চোয়াল, বাহু, পিঠ এমনকি দাঁতেও ছড়াতে পারে।
৪. অনেক সময় ব্যথা কোথা থেকে আসছে তা বোঝা যায় না।
৫. বুকে জ্বালাপোড়া, চাপ, নিষ্পেষণ বা আড়ষ্ট ভাব সৃষ্টি হয়ে অস্বস্তির প্রকাশ ঘটায়।
৬. বুকে ব্যথা ছাড়াও হজমে গন্ডগোল ও বমিভাব হতে পারে।
৭. ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া কিংবা দম ফুরিয়ে হাঁপানো দেখা দিতে পারে।
হার্ট অ্যাট্যাক (Heart Attack or Myocardial Infraction):
চর্বি জাতীয় পদার্থ, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন প্রভৃতি করোনারি ধমনির অন্তর্গাত্রে জমা হয়ে বিভিন্ন আকৃতির প্লাক (plaques) গঠন করে। একে করোনারি অ্যাথেরোমা (coronary atheroma) বলে।
প্লাকের বহির্ভাগ ক্রমশ শক্ত হয়ে ওঠে।
এভাবে প্লাক শক্ত হতে হতে যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছায় তখন এগুলো বিদীর্ণ হয়।
অণুচক্রিকা জমা হয়ে প্লাকের চতুর্দিকে তখন রক্ত জমাট বাঁধাতে শুরু করে।
রক্ত জমাট বাঁধার কারণে করোনারি ধমনির লুমেন (গহ্বর) সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে হৃৎপেশিতে পুষ্টি ও অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়, ফলে হৃৎপেশি ধ্বংস হয়ে যায় বা মরে যায় এবং মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর নাম হার্ট অ্যাট্যাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (myocardial infraction; মায়োকার্ডিয়াল অর্থ হৃৎপেশি, আর ইনফার্কশন অর্থ অপর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহের কারণে টিস্যুর মৃত্যু)।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ (Symptoms of Heart Attack):
১. বুকে ব্যথা
২. উর্ধ্বাঙ্গের অন্যান্য অংশে অস্বস্তি
৩. ঘন-ঘন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস
৪. বমি-বমি ভাব
৫. ঘুমে ব্যাঘাত
হার্ট ফেইলিউর (Heart Failure):
হৃৎপিন্ড যখন দেহের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত রক্তের যোগান দিতে পারে না তখন এ অবস্থাকে হার্ট ফেইলিউর বলে অনেক সময় হৃৎপিন্ড রক্তে পরিপূর্ণ না হতে পারায়, কখনওবা হৃৎপ্রাচীরে যথেষ্ট শক্তি না থাকায় এমনটি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে উভয় সমস্যাই একসঙ্গে দেখা যায়। অতএব হার্ট ফেইলিউর মানে হৃৎপিন্ড বন্ধ হয়ে গেছে, বা থেমে যাওয় উপক্রম হয়েছে তা নয় । তবে হার্ট ফেইলিউরকে হৃৎপিন্ডের একটি মারাত্মক অবস্থা বিবেচনা করে সুচিকিৎসার কথা বলা হয়েছে।
হার্ট ফেইলিউরের কারণঃ
করোনারি ধমনির অন্তঃস্থ গাত্রে কোলেস্টেরল জমে ধমনির গহ্বর সংকীর্ণ করে দিলে হৃৎপ্রাচীর পর্যাপ্ত O:-সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়। কালান্তরে হার্ট ফেইলিউর ঘটে। উচ্চ রক্তচাপ বেশি দিন স্থায়ী হলে ধমনির অন্তঃস্থ প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। ফলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং হৃৎপিন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে । ডায়াবেটিস হলে দেহ পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন বা সঠিকভাবে ব্যবহারও করতে পারে না। এ কারণে ধীরে ধীরে হৃৎপেশি ও হৃৎপিন্ডের বাহিকাগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে হার্ট ফেইলিউর ঘটে। হৃৎপিন্ডে জন্মগত বা সংক্রমণজনিত কারণেও হার্ট ফেইলিউর ঘটতে পারে।
হার্ট ফেইলিউরের লক্ষণঃ
১. সক্রিয়, নিষ্ক্রিয় এমনকি ঘুমের মধ্যেও শ্বাসকষ্টে ভোগা এবং ঘুমের সময় মাথার নিচে দুটি বালিশ না দিলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।
২. সাদা বা গোলাপি রঙের রক্তমাখানো মিউকাসসহ স্থায়ী কাশি বা ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস-প্রশ্বাস।
৩. শরীরের বিভিন্ন জায়গার টিস্যুতে তরল জমে ফুলে উঠে।
৪. পা, গোড়ালি, পায়ের পাতা, উদর ও যকৃত স্ফীত হয়ে যায়। জুতা পড়তে গেলে হঠাৎ আঁটসাট মনে হয়।
৫. প্রতিদিন সব কাজে, সবসময় ক্লান্তিভাব। বাজার-সদাই করা, সিঁড়ি দিয়ে উঠা, কিছু বহন করা বা হাঁটা সবকিছুতেই শ্রান্তিভাব।
৬. পাকস্থলি সব সময় ভরা মনে হয় কিংবা বমি ভাব থাকে । ৭. হৃৎস্পন্দন এত দ্রুত হয় মনে হবে যেন হৃৎপিন্ড এক প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ৮. কাজ-কর্ম, চলনে অসামঞ্জস এবং স্মৃতিহীনতা প্রকাশ পায় ।
হার্ট ফেইলিউরের প্রতিকারঃ
অসুখের শুরুতেই হার্ট ফেইলিউরের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হলে এবং প্রতিকার সম্বন্ধে সতর্ক হলে রোগীর তেমন সমস্যা থাকে না, সক্রিয় জীবন যাপনেও কোনো কিছু বাধা হয় না। হার্ট ফেইলিউরে আক্রান্ত রোগীদের সাধারণত ৩ ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ রাখার চেষ্টা করা হয়।
১. জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তন : স্বাস্থ্যসম্মত আহার হচ্ছে রোগীদের প্রধান অবলম্বন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকা দেখে নিয়মিত সুষম পানাহার করা উচিত।
২. ওষুধ গ্রহণ : হার্ট ফেইলিউরের ধরন দেখে চিকিৎসক যে সব ওষুধ নির্বাচিত করবেন নিয়মিত তা সেবন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে।
৩. অন্যান্য চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া : হার্ট ফেইলিউর যেন খারাপের দিকে মোড় না নেয় সেদিকে দৃষ্টি রেখে বিভিন্ন শারীরিক অব্যবস্থাপনা সারিয়ে তুলতে হবে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যেমন- শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে টিস্যুতে পানি জমে থাকা । চিকিৎসককে বলতে হবে কখন ওজন পরীক্ষা করাতে হবে এবং ওজন পরিবর্তন সম্বন্ধে কখন তাঁকে রিপোর্ট করতে হবে।
উল্লিখিত ৩টি প্রতিকার পদ্ধতিতে কাজ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শল্যচিকিৎসা বা অন্য কোনো ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
হার্ট ফেইলিউর
হার্ট অ্যাটাক
অ্যারিথমিয়া
অ্যানজাইনা
পেসমেকারঃ হৃৎপিন্ডের ডান অ্যাট্রিয়াম-প্রাচীরের উপর দিকে অবস্থিত, বিশেষায়িত কার্ডিয়াক পেশিগুচ্ছে গঠিত এ স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রে নিয়ন্ত্রিত বজায় রাখে তাকে পেসমেকার বলে। মানুষের হৃৎপিন্ডে সাইনো-অ্যাট্রিয়াল নোড (sino-atrial node) হচ্ছে পেসমেকার। এটি অকেজো বা অসুস্থ হলে হৃৎস্পন্দন সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য যে কম্পিউটারাইজড বৈদ্যুতিক যন্ত্র দেহে স্থাপন করা হয় তাকেও পেসমেকার বলে । অতএব, পেসমেকার দুধরনেরঃ একটি হচ্ছে হৃৎপিন্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশরূপী সাইনো-অ্যাট্রিয়াল নোড (SA নোড) যা প্রাকৃতিক পেসমেকার নামে পরিচিত; অন্যটি হচ্ছে যান্ত্রিক পেসমেকার।
যান্ত্রিক পেসমেকার কার্যক্রম (Artificial Pacemaker Activities): অসুস্থ ও দুর্বল হৃৎপিন্ডে বিদ্যুৎ তরঙ্গ সৃষ্টি করে স্বাভাবিক স্পন্দন হার ফিরিয়ে আনার ও নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে বুকে বা উদরে চামড়ার নিচে স্থাপিত ছোট একটি যন্ত্রকে পেসমেকার বলে। দেহকে সুস্থ, সবল ও সক্রিয় রাখতে হলে হৃৎপিন্ডের সুস্থতা বজায় ও নিয়ন্ত্রণে রাখা একান্ত জরুরী। হৃৎপিন্ডের সুস্থতা পরিমাপের প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে হৃৎস্পন্দনের পরীক্ষা- নিরীক্ষা হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে ধীর লয় বা দ্রুত গতিসম্পন্ন কিংবা অনিয়ত হলে অর্থাৎ অস্বাভাবিক স্পন্দন হলে পর্যন্ত হতে পারে। পেসমেকার ব্যবহারে সব ধরনের অ্যারিথমিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, বাকি জীবন সক্রিয় হয়ে যেতে পারে। প্রচন্ড অ্যারিথমিয়ায় দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে, মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে বা মৃত্যু তাকে অ্যারিথমিয়া (arrhythmia) বলে। এমন অবস্থায় মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় বা ফ্যাকাশে থাকা যায়। দুজন আমেরিকান বিজ্ঞানী William Chardack এবং Wilson Greatbatch, ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে দেহে স্থাপনযোগ্য পেসমেকার আবিষ্কার করেন।
যান্ত্রিক পেসমেকারের গঠনঃ
একটি লিথিয়াম ব্যাটারি, কম্পিউটারাইজড জেনারেটর ও শীর্ষে সেন্সরযুক্ত কতকগুলো তার নিয়ে একটি পেসমেকার গঠিত। সেন্সরগুলোকে ইলেকট্রোড (electrode) বলে। ব্যাটারি জেনারেটরকে শক্তি সরবরাহ করে। ব্যাটারি জেনারেটর একটি পাতলা ধাতব বাক্সে আবৃত থাকে। তারগুলোর সাহায্যে জেনারেটরকে হৃৎপিন্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ইলেকট্রোডগুলো হৃৎপিন্ডের বৈদ্যুতিক কর্মকান্ড শনাক্ত করে তারের মাধ্যমে জেনারেটরে প্রেরণ করে।
পেসমেকারে অপরিবাহী আবরণযুক্ত (insulated) ১-৩টি তার থাকে। পেসমেকারের তারকে লিড (lead) বলে। হৃৎপিন্ডের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে তার প্রবেশের ধরন অনুযায়ী পেসমেকার নিচে বর্ণিত ৩ রকম।
১. এক প্রকোষ্ঠ পেসমেকার (Single chamber pacemaker) : এ ধরনের পেসমেকারে একটি তার (লিড) থাকে যা জেনারেটর থেকে হৃৎপিন্ডের শুধু ডান অ্যাট্রিয়াম (অলিন্দ) বা ডান ভেন্ট্রিকল (নিলয়) -এ বিদ্যুৎ তরঙ্গ বহন করে।
২. দ্বি-প্রকোষ্ঠ পেসমেকার (Dual-chamber pacemaker) : এ ধরনের পেসমেকারে দুটি তার (লিড) থাকে যা জেনারেটর থেকে হৃৎপিন্ডের দুটি প্রকোষ্ঠে অর্থাৎ ডান অ্যাট্রিয়াম ও ডান ভেন্ট্রিকলে বিদ্যুৎ তরঙ্গ বহন করে।
৩. ত্রি-প্রকোষ্ঠ পেসমেকার (Triple-chamber pacemaker) : এ ধরনের পেসমেকারে তিনটি তার (লিড) থাকে যার একটি জেনারেটর থেকে ডান অ্যাট্রিয়ামে, আরেকটি ডান ভেন্ট্রিকলে এবং অন্যটি বাম ভেন্ট্রিকলে বিদ্যুৎ তরঙ্গ বহন করে। এটি অত্যন্ত দুর্বল হৃৎপেশির হৃৎপিন্ডে স্থাপন করা হয় (না হলে হার্ট ফেইলিউরের সম্ভাবনা থাকে)। পেসমেকার এক্ষেত্রে ভেন্ট্রিকল দুটিকে সংকোচন ক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়ে রক্তপ্রবাহে উন্নতি ঘটায়।
পেসমেকার যেভাবে কাজ করেঃ
জেনারেটরের কম্পিউটার-চিপ এবং হৃৎপিন্ডে যুক্ত সেন্সরবাহী তার ব্যক্তির চলন, রক্তের তাপমাত্রা, শ্বসন ও বিভিন্ন শারীরিক কর্মকান্ড মনিটর করে। প্রয়োজনে কর্মকান্ডের ধারা অনুযায়ী হৃৎপিন্ডকে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করে। পেসমেকারের ব্যাটারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মেয়াদ থাকে ৫-১০ বছরের মতো।
ওপেন হার্ট সার্জারি (Open Heart Surgery): শল্যচিকিৎসক যখন রোগীর বুক কেটে উন্মুক্ত করে হৃৎপিন্ডে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন তখন সে প্রক্রিয়াকে ওপেন হার্ট সার্জারি বলে । এটি একটি বড় শল্যচিকিৎসামূলক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত অনেক জটিল সমস্যা ও রোগ মুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অন্য সব চিকিৎসার পরও যদি হৃৎপিন্ডে বড় ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে ওপেন হার্ট সার্জারি ছাড়া উপায় থাকে না।
ওপেন হার্ট সার্জারির প্রকারভেদঃ ওপেন হার্ট সার্জারী প্রধানত নিচে বর্ণিত তিন উপায়ে করা হয়।
১. অন-পাম্প সার্জারি (On-pump surgery) : এ ধরনের সার্জারীতে একটি হৃদ-ফুসফুস মেশিনে যা কার্ডিওপালমোনারি বাইপাস (cardiopulmonary bypass) নামে পরিচিত সেটি ব্যবহার করা হয়। এ যন্ত্রটি সাময়িকভাবে হৃৎপিন্ডের কাজের দায়িত্ব নিয়ে অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্ত পাম্প করে বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে প্রেরণ করে। এটি হচ্ছে প্রচলিত পদ্ধতি। এ প্রক্রিয়ায় শল্যচিকিৎসক যখন অস্ত্রোপচার করেন তখন হৃৎপিন্ডে রক্তও থাকে না, হৃৎস্পন্দনও হয় না
২. অফ-পাম্প সার্জারি বা বিটিং হার্ট (Off-pump surgery or Beating heart) : এ ধরনের সার্জারিতে হৃদ- ফুসফুস মেশিন ব্যবহৃত হয় না, বরং চিকিৎসক সক্রিয় হৃৎস্পন্দনরত হৃৎপিন্ডেই অস্ত্রোপচার করেন। তবে হৃৎস্পন্দনের হার ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে সামান্য মন্থর করে রাখা হয়।
৩. রোবট-সহযোগী সার্জারি ( Robot-assisted surgery) : এ ধরনের সার্জারিতে শল্যচিকিৎসক বিশেষ কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত রোবটিক হাত (যান্ত্রিক হাত)-এর সাহায্যে অস্ত্রোপচার করেন। চিকিৎসক কম্পিউটার সার্জারির ত্রিমাত্রিক দৃশ্য দেখতে পান এবং কাজ সম্পন্ন করেন। এ ধরনের সার্জারি অত্যন্ত সূক্ষ্ণ ও সঠিক হয়ে থাকে। ওপেন হার্ট সার্জারি পদ্ধতি
একজন কার্ডিওভাস্কুলার শল্যচিকিৎসকের অধীনে একটি শল্যচিকিৎসক দল ওপেন হার্ট সার্জারির মতো জটিল অস্ত্রোপচার পরিচালনা করেন। সার্জারির শুরুতে চিকিৎসকের নির্দেশে সাধারণ অ্যানেসথেসিয়া (general anesthesia) কিংবা স্নায়ুবন্ধক অ্যানেসথেসিয়া (nerve block anesthesia) প্রয়োগ করা হয়। সার্জারি শুরু হয় বুক ও স্টার্ণাম কেটে বড়-সড় গর্ত সৃষ্টির মাধ্যমে। তা না হলে রোগীর ভিতরটা ভালোমতো দেখা যায় না। অন-পাম্প সার্জারি হলে ওষুধ প্রয়োগে হৃৎস্পন্দন বন্ধ করে দিয়ে হৃদ-ফুসফুস মেশিন (heart lung machine)-এর সাহায্যে পাম্প করে সারা দেহে রক্তের সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়। সার্জারি শেষে মেশিন খুলে নেয়া হয় ।
অন্যদিকে, করোনারী আর্টারী বাইপাস সার্জারি বা হৃৎকপাটিকা মেরামত বা পুনঃস্থাপন করার সময় সার্জন আর প্রচলিত বড় ধরনের কাটা-ছেড়া না করে বুকের মাঝামাঝি ছোট ফুটা করে তার ভেতরে ক্যামেরাযুক্ত যন্ত্র ঢুকিয়ে রোগীর অভ্যন্তরভাগ দেখেন ভিডিওর পর্দায়। এ প্রক্রিয়ায় সার্জারি হলে সময় ও ব্যথা উভয়ই কম লাগে, সংক্রমণজনিত জটিলতাও কম হয় । রোগীর ব্যক্তিগত পছন্দ, শনাক্তকরণ, বয়স, অসুখের ইতিহাস, স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রভৃতির উপর এ ধরনের যুগে মার্জারি নির্ভর করে।
সাবধানতা জটিল কার্ডিওভাস্কুলার অসুখে ওপেন হার্ট সার্জারির স্মরণাপন্ন হতে হয়। অন্ততঃ বাংলাদেশে এ সার্জারির খরচ মোটেও কম নয়। সার্জারির পর ভুক্তভোগীকে সবসময় সতর্ক থাকতে হয়। যেমন-হৃৎপিন্ড সুস্থ রাখে এমন আহার গ্রহণ; নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা। ব্যায়াম করা; বয়স-উচ্চতার সঙ্গে মিল রেখে ওজন ঠিক রাখা; চাপ থেকে মুক্ত থাকা; ধূমপান ছেড়ে দেওয়া।
করোনারি বাইপাস সার্জারিঃ
এক একাধিক করোনারি ধমনির লুমেন (গহ্বর) রুদ্ধ হয়ে গেলে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ অব্যাহত রাখতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দেহের অন্য অংশ থেকে (যেমন-পা থেকে) একটি সুস্থ রক্তবাহিকা (ধমনি বা শিরা) কেটে এনে এক ধর্মনির পাশে স্থাপন করে রক্ত সরবরাহের যে বিকল্প পথ সৃষ্টি করা হয় তাকে করোনারি বাইপাস বলে । করোনারি এইপাস সৃষ্টির সামগ্রিক অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়াটিকে করোনারি বাইপাস সার্জারি বলা হয়।
করোনারি হৃদরোগ সৃষ্টির প্রধানতম কারণ হচ্ছে করোনারি ধমনির রুদ্ধতা। এর মূল কারণ ধর্মনির অন্তঃস্থ প্রাচীর ঘিরে ক্রমশ সঞ্চিত হওয়া উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল জাতীয় হলদে চর্বি পদার্থ ধমনি প্রাচীরের এন্ডোথেলিয়ামে এগুলো জমা হয়। পরে এসব পদার্থে তন্তু পুঞ্জিভূত হয়ে শক্ত হতে শুরু করে এবং চুনময় পদার্থে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়াকে আর্টারিওস্ক্লেরোসিস (arteriosclerosis) বলে। আর পুঞ্জিভূত পদার্থগুলোকে বলে অ্যাথেরোমেটাস প্লাক্স (atheromatous plaques)। প্লাক্সের আধিক্যের কারণে ধমনিপথ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং এক সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন হৃৎপেশি O2-সমৃদ্ধ রক্ত না পেলে হার্ট ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হয় । জীবনের প্রতি হুমকিস্বরূপ এসব জটিলতা এড়াতে O2-সমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপেশিতে সরবরাহ করার বিকল্প পথের সৃষ্টি করতে হয় । বাইপাস সড়কের মতো হৃৎপিন্ডে বাইপাস ধমনি নির্মাণের জটিল প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে হয়। ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিস প্রভৃতি ধমনি গাত্রে প্লাক জমার কাজ ত্বরান্বিত করে। তা ছাড়া, ৪৫ বছরের বেশি বয়সি পুরুষ ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সি নারীর ক্ষেত্রে কিংবা পরিবারের ইতিহাসেযদি করোনারি ধমনি সংক্রান্ত ব্যাধির নজির থেকে থাকে তাহলে আরও কম বয়সে করোনারি বাইপাস করার ঝুঁকি দেখ দিতে পারে।
যখন করোনারি ধমনির লুমেন ৫০-৭০% সংকীর্ণ হয় তখন থেকেই O2-সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ হৃৎপেশিতে বা যায়। বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। প্লাকের চূড়ায় যদি রক্ত জমাট বাধে তাহলে পরিস্থিতি হার্ট অ্যাটাকের দিকে চলে যায়।
ধর্মনির লুমেন যদি ৯০-৯৯% সংকীর্ণ হয়ে যায় তখন অস্থির অ্যানজাইনা (unstable angina) ত্বরান্বিত এমন অবস্থায় করোনারি বাইপাস কার্যক্রম গ্রহণ করা ছাড়া উপায় থাকে না।
করোনারি বাইপাস একটি জটিল প্রক্রিয়া। রোগ শনাক্তকর প্রক্রিয়ায় হৃৎচিকিৎসক করোনারি ধমনির রোগের সঠিক অবস্থান, ধরন ও ব্যাপকতা নির্ণয় করেন। পরবর্তী ধাপে রোগীয় হৃৎপিন্ড, বয়স, লক্ষণের ব্যাপকতা, অন্যান্য অসুখ-বিসুখের অবস্থা ও জীবনযাত্রা পদ্ধতি বিবেচনা করে হৃদ ও শল্যচিকিৎসক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেবেন। বৃদ্ধ করোনারি ধমনিকে এড়িয়ে তিনপথ নির্মাণ করতে বুক, হাত, পা ও তলপেট থেকে ধমনি সংগ্রহ করা হয়। কয়টি করোনারি ধমনি বাইপাস করতে হবে তার উপর নির্ভর করে অস্ত্রোপচারের সময়কাল । সাধারণত ৩-৫ ঘন্টা সময়ের মধ্যে বাইপাস কার্যক্রম সম্পন্ন হয় এক সপ্তাহের মধ্যে রোগী হাসপাতাল ত্যাগ করতে পারেন। কোন জটিলতা না থাকলে ২ মাসের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যান। এরপর থেকে রোগীকে নিয়মিত চেকআপের মধ্যে থাকতে হয়।
বিধিনিষেধঃ
বাইপাস সার্জারির পর রোগীকে বেশকিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। যেমন- ধূমপান ত্যাগ; কোলেস্টেরলের চিকিৎসা; উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ; ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ; নিয়মিত নির্ধারিত ব্যায়াম; স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখা; হৃদ-বান্ধব ভোজনে অভ্যস্ত হওয়া; চাপ ও রাগ নিয়ন্ত্রণে আনা; নির্ধারিত ওষুধ সেবন এবং চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করা।
এনজিওপ্লাস্টিঃ বড় ধরনের অস্ত্রোপচার না করে হৃৎপিন্ডের সংকীর্ণ ল্যুমেন (গহ্বর)-যুক্ত বা রুদ্ধ হয়ে যাওয়া করোনারি ধমনি পুনরায় প্রশস্ত লুমেনযুক্ত বা উন্মুক্ত করার পদ্ধতিকে এনজিওপ্লাস্টি (angio = রক্তবাহিকা + plasty পুনর্নির্মাণ) বলে = এনজিওপ্লাস্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে সরু বা বন্ধ হয়ে যাওয়া ল্যুমেনের ভেতর দিয়ে হৃৎপিন্ডে পর্যাপ্ত O2-সরবরাহ নিশ্চিত করে হৃৎপিন্ড ও দেহকে সচল রাখা। বুকে ব্যথা (অ্যানজাইনা), হার্ট ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তির সহজ উপায় এনজিওপ্লাস্টি। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ডের ডাঃ অ্যানড্রেস প্রয়েন জিগ সর্বপ্রথম এ পদ্ধতি প্রয়োগ করবেন ।
এনজিওপ্লাস্টির প্রকারভেদঃ
এনজিওপ্লাস্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে প্লাক জমা বা রক্ত জমাটের কারণে সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া বা রূদ্ধ হয়ে যাওয়া করোনারি ধমনির ল্যুমেন চওড়া করে O2-সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখা । প্লাকের ধরন ও অবস্থান অনুযায়ী এনজিওপ্লাস্টির ধরনও বিভিন্ন হয়ে থাকে।
এনজিওপ্লাস্টি ৪ ধরনেরঃ
• বেলুন এনজিওপ্লাস্টি (Ballon angioplasty),
• লেজার এনজিওপ্লাস্টি angioplasty),
• অ্যাথরেকটমি (Athrectomy) ও
• করোনারি স্টেনটিং (Coronary stenting)। উল্লিখিত ধরনগুলোর মধ্যে করোনারি স্টেনটিং এনজিওপ্লাস্টি বর্তমানে বেশি প্রচলিত।
এনজিওপ্লাস্টি প্রক্রিয়াঃ এনজিওগ্রাম (angiogram) করে নিশ্চিত হওয়ার পর এধরনের সার্জারি করা হয়। এ ধরনের কার্যক্রমে ঊর্ধ্ব ব বা পা-এর একটি অংশ কেটে ধমনির ভিতর দিয়ে পাতলা নল বা ক্যাথেটার (catheter) প্রবেশ করিয়ে কৌশলে রূদ্ধ আংশিক বুজে যাওয়া ধমনিতে পৌঁছানো হয় । ক্যাথেটারটিতে একটি সরু তার, তারটির অগ্রভাগে একটি চুপসানো বেলুন ও বেলুনটির চারদিকে একটি তারের জালের চৌঙ বসানো থাকে । জালিকাটিকে স্টেন্ট (stent) বলে। স্টেন্টটি সাধারণ স্টিলের (বিশেষ প্রক্রিয়ায় নির্মিত) তৈরি । তবে এখন অন্যান্য ধাতুর বা বিশেষ ধরনের সুতার তৈরি স্টেন্টও ব্যবহার কর হয়। বেলুনটি বাইরে থেকে ফোলানো হয় এবং বেলুনটির সাথে সাথে স্টেনটিও ফুলতে থাকে। ফুলানো বেলুনের চাপে স্টেন্টটি প্রতিবন্ধক স্থানটির উপর চাপ দিতে থাকে। এর ফলে ধমনির গহ্বরটি ধীরে ধীরে বড় হতে হতে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থাতেই পৌঁছতে পারে। সেন্টটি ধমনির সাথে সেটে যায় এবং চর্বি যুক্ত কণা নিষ্কাশিত হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে ৩০ মিনিট সময় লাগে।
এনজিওপ্লাস্টির উপকারিতাঃ করোনারি হৃদরোগের অন্যতম প্রধান রোগ সৃষ্টি হয় করোনারি ধমনিতে। ধমনির ভিতর ব্লক সৃষ্টি হলে পর্যাপ্ত 02- সমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপেশিতে সংবহিত হতে পারে না। ফলে হার্ট ফেইলিউর ও হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এমন মারাত্মক অবস্থা মোকাবিলায় এনজিওপ্লাস্টি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
এনজিওপ্লাস্টি ধমনির লুমেন থেকে ব্লক অপসারণ বা হ্রাস করতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা উপশম হয়। হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমিয়ে জীবন রক্ষায় অবদান রাখে। যেহেতু বুক উন্মুক্ত করতে হয় না সেহেতু কষ্ট, সংক্রমণ ও দীর্ঘকালীন সতর্কতার প্রয়োজন পড়ে না। মাত্র এক থেকে কয়েক ঘন্টায় জীবন রক্ষাকারী এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে এবং কয়েক দিন পর থেকেই হালকা কাজকর্ম করা সম্ভব। সুস্থ হতে ৪ সপ্তাহের বেশি লাগে না। যাঁরা বৃক্কের অসুখে ভুগছেন, কিংবা এনজিওগ্রামের সময় রঞ্জকের প্রতি অ্যালার্জি দেখা দেয় এবং যাঁদের বয়স ৭৫ বছরের বেশি তাঁদের ক্ষেত্রে এনজিওপ্লাস্টি কিছুটা অসুবিধাজনক হতে পারে ।
*পালমোনারি সংবহন (Pulmonary circulation):
যে সংবহন রক্ত হৃৎপিণ্ডের ডান ভেন্ট্রিকল থেকে ফুসফুসে পৌঁছায় এবং ফুসফুস থেকে বাম অ্যাট্রিয়ামে ফিরে আসে তাকে পালমোনারি বা ফুসফুসীয় সংবহন বলে।
ডান ভেন্ট্রিকল পালমোনারি ধমনি ফুসফুস পালমোনারি শিরা বাম অ্যাট্রিয়াম → বাম ভেন্ট্রিকল
কাজ :
এ সংবহনের মাধ্যমে CO2 সমৃদ্ধ রক্ত ফুসফুসে প্রবেশ করে। সেখানে অ্যালভিওলাসে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় গ্যাসের বিনিময় ঘটে ফলে O2 সমৃদ্ধ রক্ত শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে।
*পোর্টাল সংবহন (Portal circulation ):
মেরুদণ্ডী প্রাণিতে সাধারণত হেপাটিক (hepatic) এবং রেনাল (renal)– এ দুধরনের পোর্টাল সংবহন দেখা যায়। তবে রেনাল পোর্টাল সংবহন মানুষসহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণিতে অনুপস্থিত।
হেপাটিক (যকৃত) পোর্টাল সংবহন (Hepatic Portal circulation ):
পৌষ্টিক অঙ্গসমূহ হেপাটিক পোর্টাল শিরা যকৃত হেপাটিক শিরা ইনফিরিয়র ভেনাক্যাভা → হৃৎপিণ্ড
*করোনারি সংবহন (Coronary Circulation):
হৃৎপিণ্ডের হৃৎপেশিতে রক্ত সঞ্চালনকারি সংবহনকে করোনারি রক্ত সংবহন বলে।
সিস্টেমিক ধমনির গোড়া থেকে সৃষ্ট করোনারি ধমনির মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের প্রাচীরে O2 সমৃদ্ধ রক্ত সংবাহিত হয়। হৃৎপিণ্ডের প্রাচীরে CO2 সমৃদ্ধ রক্ত করোনারি শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের ডান অ্যাট্রিয়ামে প্রবেশ করে।
সিস্টেমিক ধমনি → করোনারি ধমনি → হৃৎপ্রাচীর → করোনারি শিরা → ডান অ্যাট্রিয়াম
সিস্টেমিক সংবহনতন্ত্রঃ যে সংবহনে রক্ত বাম ভেন্ট্রিকল থেকে বিভিন্ন রক্ত বাহিকার মাধ্যমে অঙ্গগুলোতে পৌঁছায় এবং অঙ্গ থেকে ডান অ্যাট্রিয়ামে ফিরে আসে, তাকে সিস্টেমিক সংবহন বলে। হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়ে পুনরায় হৃৎপিণ্ডে ফেরত আসতে সিস্টেমিক সংবহনের সময় লাগে ২৫-৩০ সেকেন্ড।
কাজঃ সিস্টেমিক সংবহনে রক্ত দেহকোষের চারপাশে অবস্থিত কৈশিক জালিকা অতিক্রমকালে কোষে O2 খাদ্যসারসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করে এবং একই সাথে কোষে সৃষ্ট CO2 , রেচন পদার্থ ইত্যাদি কোষ থেকে অপসারিত হয়।
বাম ভেন্ট্রিকল → অ্যাওর্টা → টিস্যু ও অঙ্গ → মহাশিরা → ডান অ্যাট্রিয়াম → ডান ভেন্ট্রিকল
Read more